৫,২০০ বছর আগের হরপ্পান সভ্যতার নিদর্শনের খোঁজ গুজরাটে

৫,২০০ বছর আগের হরপ্পান সভ্যতার নিদর্শনের খোঁজ গুজরাটে 

ভারতের গুজরাট রাজ্যের কচ্ছ জেলায় সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উন্মোচিত হয়েছে একটি ৫,২০০ বছর পুরনো হরপ্পান (সিন্ধু উপত্যকা) সভ্যতার বসতি। এই আবিষ্কার ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতা চর্চায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (ASI) পরিচালিত এই খননকার্যে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো প্রমাণ করে, হরপ্পানরা শুধুমাত্র সিন্ধু উপত্যকা নয়, বরং তার বাইরেও বিস্তৃত অঞ্চলে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিল।

🔎খননস্থলের পরিচয়: এই প্রত্নতাত্ত্বিক খননটি গুজরাটের কচ্ছ জেলার খবদা তালুকায় অবস্থিত "ভানগসর" নামক একটি স্থানে পরিচালিত হয়। এলাকাটি বর্তমানে মরুভূমি পরিবেষ্টিত, কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রাচীনকালে এখানে একটি নদীর প্রবাহ ছিল, যা বসতির গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। 

🏺 আবিষ্কৃত নিদর্শনসমূহ: প্রত্নতাত্ত্বিকরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে: পোড়ামাটির পাত্র ও কলস চকচকে মৃৎপাত্র (burnished ware) ও সুক্ষ্ম কারুকার্য যুক্ত হরপ্পান পাত্র প্রাচীন দালানের ধ্বংসাবশেষ, ইটের গাঁথুনি কঙ্কাল ও হাড়, যা মানব ও গৃহপালিত প্রাণীর পোড়ামাটির খেলনা, সিলমোহর এবং অলঙ্কার খাদ্য সংরক্ষণের কুয়া ও শস্য সংরক্ষণের গুদাম এইসব নিদর্শনের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে যে এই বসতিটি কেবল একটি কৃষি-ভিত্তিক সমাজ ছিল না, বরং তাদের জটিল নগর পরিকল্পনা ও সমাজিক কাঠামোর প্রমাণও এখানে মিলেছে। 

 🧭 সময়কাল ও বিশ্লেষণ: কার্বন ডেটিং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে বসতিটির বয়স প্রায় ৫,২০০ বছর, অর্থাৎ এটি হরপ্পান সভ্যতার প্রাক-পর্ব (Pre-Harappan বা Early Harappan Phase) এর অন্তর্গত। এই সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ থেকে ২৬০০ সালের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত বসতি ছিল, যেখানে জলের ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সংরক্ষণ ও বাসগৃহ নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। 

 🌍 সভ্যতার বিস্তার ও গুরুত্ব: এই আবিষ্কারটি প্রমাণ করে যে হরপ্পান সভ্যতা শুধু সিন্ধু ও পাঞ্জাব অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং গুজরাট, মহারাষ্ট্র, এমনকি দক্ষিণ ভারতে পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বসতির মাধ্যমে জানা যায় যে হরপ্পানরা সমুদ্রপথে ব্যবসা-বাণিজ্যেও দক্ষ ছিল, এবং তারা উপকূলীয় অঞ্চলেও বসতি স্থাপন করেছিল। 

 🧑‍🏫 প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতামত: প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. এন. কে. রাও বলেন, "এই আবিষ্কার হরপ্পান সভ্যতার বিস্তার ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন আলো ফেলেছে। কচ্ছ অঞ্চলের প্রতিটি খনন আমাদের নতুন কিছু জানায়, যা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ